“চামারা” লাল চালের আদ্যপান্ত
ভূমিকা
আমন শব্দটির উৎপত্তি আরবি শব্দ ‘আমান’ থেকে যার অর্থ আমানত। অর্থাৎ ‘আমন’ কৃষকের কাছে একটি নিশ্চিত ফসল বা আমানত হিসেবে পরিচিত ছিল। আবহমান কাল থেকে এ ধানেই কৃষকের গোলা ভরে, যা দিয়ে কৃষক তার পরিবারের ভরণ-পোষণ, পিঠাপুলি, আতিথেয়তাসহ সংসারের অন্যান্য খরচ মিটিয়ে থাকে।
আমন ধান মূলত দুই প্রকার; রোপা আমন ও বোনা আমন। রোপা আমন আষাঢ় মাসে বীজ তলায় বীজ বোনা হয়, শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে মূল জমিতে রোপণ করা হয় এবং কার্তিক- অগ্রহায়ণ-পৌষ (এলাকাভেদে) মাসে ধান কাটা হয়।
বোনা আমন ছিটিয়ে বোনা হয়। চৈত্র-বৈশাখ মাসে মাঠে বোনা আমনের বীজ বপন করা হয় এবং অগ্রহায়ণ মাসে পাকা ধান কাটা হয়। একে আছড়া আমন, বাওয়া আমন বা গভীর পানির আমনও বলা হয়।
গভীর পানিতে জন্মায় এমন একটি আমন ধান “চামারা”। এই ধানের বন্যার পানিতেও টিকে থাকার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে । বর্ষা মৌসুমে পানি যত বাড়তে থাকে, তার সাথে সাথে বাড়তে থাকে ধানগাছও। গভীর পানিতে আবাদ হয় তাই “চামারা” ধান চাষ করতে কোনো প্রকার রাসায়নিক সার ও কীটনাশক লাগে না। এছাড়া গভীর পানিতে হয় বলে চামারা ধানের ক্ষেতে সেচ দিতে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তলোন করতে হয় না।
জমিতে সেচের সাহায্যে উচ্চফলনশীল বোরো চাষের ফলে গভীর পানির ধান বা জলিধানের জমির পরিমাণ হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৯ লক্ষ হেক্টর। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫.১ লক্ষ হেক্টর ধানিজমি বর্ষাকালে অনাবাদি থাকে।
বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জমি প্লাবন সমভূমি। এই জমিগুলি আমন মৌসুমে অনাবাদী থাকে কারণ পানিতে যে ধানগুলি হয় তার চাল মোটা। টাঙ্গাইল , মানিকগঞ্জ, ঢাকা জেলার নদীর তীরবর্তী নিম্নভূমিতে এই ধানের আবাদ এখনও টিকে আছে। এই ধানের চাল মোটা ও লাল রঙের হয়। ভাতের স্বাদ কিছুটা মিষ্টি। চামারা চালের খিচুড়ি অসাধারণ আর পিঠাও হয় সুস্বাদু।
খাদ্যাভাস পরিবর্তনের কারণে চামারা সহ অন্যান্য পানির ধানের আবাদ কমে গেছে; উপযোগিতা হারিয়েছে চিকন মিনিকেটের কাছে। অথচ চামারার স্বাদ বুঝাতেই এই গ্রাম্য বচন আছে- “ইস্টির মধ্যে মামারা যদি থাকে নানি,ধানের মধ্যে চামারা যদি থাকে পানি”